অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দখলদার ইসরাইলের “আল-আসি” গোয়েন্দা ঘাঁটি ধ্বংস, গাজা যুদ্ধে আহত ইহুদিবাদী সৈন্যের সংখ্যা বৃদ্ধি, তেলআবিবে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনায় নেতানিয়াহুর বাধার কারণে ক্রমাগত সমালোচনা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গণমাধ্যমগুলোর গুরুত্বপূর্ণ খবর হিসবে স্থান পেয়েছে।
লেবাননের হিজবুল্লাহ অধিকৃত অঞ্চলে ইসরাইলের উত্তরে ভারী অস্ত্র দিয়ে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর চারটি গোয়েন্দা ও গুপ্তচরবৃত্তির ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলার কথা জানিয়েছে। পার্সটুডে-এর মতে, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থনে এবং তাদের সাহসী প্রতিরোধকে এগিয়ে নিতে লেবাননের হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরাইলের “আল-আসি” ঘাঁটির প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা এবং এই ঘাঁটির সরঞ্জামগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
“মিস আল-জাবাল” শহরের সামনে “আল-বাগদাদি” এবং “বায়াদ বেলিদা” নামক দুটি ঘাঁটির মাঝখানে ”আল-আসি” হল উত্তর ইসরাইলের অন্যতম দিক নির্দেশনামূলক এবং গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ঘাঁটি। ইসরাইল এই ঘাঁটিকেই বেশিরভাগ আর্টিলারি হামলা চালানোর জন্য পর্যবেক্ষণ ও দিকনির্দেশনা পাওয়ার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে।
আরেকটি অভিযানে হিজবুল্লাহ সরাসরি ভারি অস্ত্র দিয়ে “কাফর শোবা”র অধিকৃত পাহাড়ি অঞ্চলে “আল-সামাকাহ” ঘাঁটিতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সৈন্যদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
লেবানিজ ইসলামিক রেজিস্ট্যান্সও অধিকৃত শেবা কৃষি খামারের আল-রাদার ঘাঁটিতে মর্টার হামলা চালিয়েছে।
একটি ইসরাইলি মিডিয়া জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর নতুন করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক লড়াই শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১০৪০০ ইসরাইলি সৈন্য আহত হয়েছে।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ ১১ তম মাসে প্রবেশ করেছে।বেশ কয়েকটি ইহুদিবাদী মিডিয়া এতো দিন ধরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছে। কারণ চলমান যুদ্ধে ইসরাইলি সৈন্যদের হতাতের ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে ইসরাইলের অভ্যন্তরে তীব্র অসন্তোষ ও প্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন আশঙ্কার কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ইহুদিবাদীদের অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত থাকায় এবং চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা অবলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে এবং ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।
এদিকে,হাজার হাজার ইসরাইলি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তারা হামাসের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছার দাবি জানিয়েছে।
অবিলম্বে হামাসের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য মন্ত্রিসভাকে চাপ দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের সাথে পুলিশের সাথে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে।
ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে এমন সময় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন হামাসের সামরিক শাখা “ইজ্জাদ্দিন আল-কাস্সাম” ব্রিগেড গাজা উপত্যকায় সম্প্রতি আবিষ্কৃত হওয়া মৃত ৬ জন ইসরাইলি বন্দীর ভিডিও প্রকাশ করেছে যার ফলে ইসরাইলে বিক্ষোভ আরো ছড়িয়ে পড়েছে।
ওরি দানিনো হচ্ছে একজন ইসরাইলি বন্দী, সে মৃত্যুর আগে রেকর্ড করা এই ভিডিওতে বলেছে, ‘নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা এবং তার যুদ্ধবাজ মন্ত্রিসভা ৭ই অক্টোবর পরাজিত হয়েছিল। তারা আমাদের বসতি স্থাপনকারীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আজ তারা আমাদের বাঁচানোর ব্যর্থ ব্যবস্থা নিয়ে একের পর এক আমাদের হত্যা করতে চায়।’
এই ইহুদিবাদী বন্দী নেতানিয়াহু এবং তার মন্ত্রিপরিষদের পাশাপাশি ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেছে, ‘যখন আমাদের উপর হামলা হয়েছিল তখন আপনি কোথায় ছিলেন? আপনি কোথায় ছিলেন যখন আমরা জানতাম না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিব? আমরা যখন একা ছিলাম তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
ভিডিওতে বক্তব্যের শেষে ইসরাইলি এই বন্দী তাদের মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তার পরিবার এবং অধিকৃত অঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানান’।
এদিকে, হামাস আন্দোলনের অন্যতম সিনিয়র নেতা ওসামা হামদান সতর্ক করেছেন, গাজায় দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে ইসরাইলি বন্দীদের ফেরত পাঠানোর পরিবর্তে তাদের হত্যা করা হবে।
হামদান বলেছেন, ইসরাইলি বন্দীরা হয় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বোমা হামলায় বা ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে অথবা প্রতিরোধ বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত হবে।
হামাসের এই কর্মকর্তা বলেছেন: হিসাবটা পরিষ্কার এবং তা হল গাজা যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে এবং ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার হলে তবেই কেবল ইসরাইলি বন্দীদের প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন হবে।
নেতানিয়াহু ফিলাডেলফিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার পর এই হামাস কর্মকর্তার বক্তব্য এসেছে।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভেতরে একটি বিস্ময়কর অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৫০ জন ইসরাইলিকে বন্দী করে। এর মধ্যে কয়েকজনকে মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply